গুগল গ্লাস বিপজ্জনক?

‘গুগল গ্লাস’ নামে একটি প্রযুক্তি-চশমা বাজারে আনছে গুগল। সমালোচকেরা আশঙ্কা করছেন, ব্যবহারকারীর মনোযোগ কেড়ে নিয়ে চারপাশের অবস্থা সম্পর্কে মস্তিষ্কে ভুল সংকেত পাঠাতে পারে গুগল গ্লাস।অসাধারণ একটি উদ্ভাবন হলেও ‘ইনঅ্যাটেনশনাল ব্লাইন্ডনেসের’ মতো সাময়িক অমনোযোগিতা তৈরি করতে পারে গুগলের এ প্রযুক্তি-চশমা। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ সম্প্রতি গুগল গ্লাসের বিপদ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।আজকাল গুগল গ্লাসের খবর চোখে পড়বে সবখানেই। চোখে পড়বে গুগল গ্লাস নিয়ে লেখা প্রযুক্তি-বিশ্লেষকদের সমালোচনাও। ফ্যাশন অপরাধের সঙ্গে তুলনা করে অনেক প্রযুক্তি-বিশ্লেষক গুগল গ্লাসের সমালোচনা করেছেন, আবার অনেকে করেছেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দৃষ্টিকোণ থেকে। সমালোচকেরা জানিয়েছেন, গুগল গ্লাস চোখে পরা কোনো ব্যক্তি কারও সঙ্গে আলাপকালে তার কথা ও ভিডিওচিত্র রেকর্ড করছে কি না, তা বোঝার উপায় থাকবে না। তবে সমালোচনা যা-ই থাক না কেন, স্মার্টফোনের সঙ্গে সম্পর্কিত স্মার্ট গ্লাস বা প্রযুক্তি-চশমার উদ্ভাবন নিশ্চয়ই প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে বৈপ্লবিক উদ্ভাবন। অনেকের মধ্যেই এ চশমা পরে দেখার আগ্রহ রয়েছে। তবে আগ্রহ যতই থাক, গুগল গ্লাসের নেতিবাচক ও ক্ষতিকর দিকটির কথা মনে রাখতেই হবে। এই গুগল গ্লাস শিশুদের চোখের ক্ষতি করতে পারে, আবার মস্তিষ্কের ক্ষমতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ‘টেকনোলজি, এডুকেশন অ্যান্ড ডিজাইন’ বা ‘টেড ২০১৩’ সম্মেলনে গুগল গ্লাসের তথ্য উপস্থাপন করেন সের্গেই ব্রিন। চশমায় প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় স্মার্টফোন ‘অসামাজিক’—এমন মন্তব্য করেছেন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন। তাঁর মতে, পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের এ যুগে স্মার্টফোন সামাজিকতা হারিয়েছে। মানুষের দিকে না তাকিয়ে, তাদের সঙ্গে কথা না বলে স্মার্টফোন ঘাঁটাঘাঁটি করাটা ‘অসামাজিক’। এক সাক্ষাত্কারে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে ব্রিন জানিয়েছিলেন, মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে রাস্তায় চলার যুগ শেষ। তিনি জানান, মানুষকে ‘স্মার্ট’ করে তুলতে গুগল আনছে স্মার্ট গ্লাস বা প্রযুক্তি-চশমা। গুগলের এ প্রযুক্তি-চশমার সঙ্গে রয়েছে একটি ছোট ব্যাটারি, যার শক্তিতে চলে চশমার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র একটি কম্পিউটার। চশমার সাহায্যে ছবি তোলা, ভিডিওচিত্র ধারণ, অডিও ধারণ করার জন্য রয়েছে বিশেষ প্রযুক্তি। ইন্টারনেট ব্রাউজ করা ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে এ চশমার সাহায্যে। ব্যবহার করা যাবে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটসহ নানা অ্যাপ্লিকেশন। এতে যুক্ত হবে কণ্ঠস্বর ও চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি। এ চশমার কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে চশমা পরা সাধারণ যাত্রীর বেশে রেল ভ্রমণ করেছেন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরেই বাজারে আসবে গুগলের স্মার্ট গ্লাস। এ চশমার দাম হতে পারে এক হাজার ৫০০ ডলার থেকে তিন হাজার ডলারের মধ্যে।
 
গুগল ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমন প্রযুক্তি তৈরি করছে, যার মাধ্যমে ফোন ব্যবহারের সময় অন্য কাজ করা যায়। সম্প্রতি শেভ্রোলেট গাড়িতে এমন প্রযুক্তি যুক্ত করেছে, যাতে মুঠোফোনে আসা বার্তা পড়ে শোনাবে গাড়ি।

এদিকে গুগল জানিয়েছে, তাদের তৈরি চশমায় সাধারণভাবে দেখতে সমস্যা হয় এমন বিষয়গুলো থাকবে না। কোনো মেইল বা বার্তা এলে ব্যবহারকারীকে জানানোর জন্য শব্দ করে নোটিফিকেশন জানাবে এ গ্লাস। প্রযুক্তি-বিশ্লেষকেরা জানান, ব্যবহারকারী চালকদের মনোযোগ কাড়বে না এ চশমা। গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোন ব্যবহারে যে সমস্যা তৈরি হয়, তা এ চশমা ব্যবহারে সমাধান হবে।

গবেষকেরা জানান, চোখের দৃষ্টি ও মনের সংযোগে ব্যাঘাত না ঘটলেই কেবল গুগল গ্লাস সফল উদ্ভাবন বলতে হবে। মানুষের মনোযোগ কোথায় ব্যাহত হয় এবং মানুষের মনঃসংযোগের সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলো বুঝতে পারলেই নিরাপদ ও বৈপ্লবিক উদ্ভাবন সম্ভব হবে।

Loading
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Flying Twitter Bird Widget By ICT Sparkle